আমার ব্যাচেলর জীবনে ২-মিনিটে নুডুলস রান্না করতে পেরেছি কিনা, আমি জানিনা। কিন্তু ২০-মিনিটে বাঁধাকপি ভাজি আমি অনেক করেছি। অনেকটা “ধর তক্তা, মার পেরেক” টাইপের রেসিপি এটা। পাতাকপি ভাজিতে উপকরণ লাগেও কম। পাতাকপি চিনলেন না? আমাদের অঞ্চলে এই জিনিস পাতাকপি নামেই বেশি প্রসিদ্ধ। ঢাকাতে অবশ্য স্মার্ট মানুষজন একে গ্রীন ক্যাবেজ বলেও ডাকে। সে, যাই হোক - যাহাই বাহান্ন, তাহাই তেপ্পান্ন।
উপকরণ
- প্রমাণ সাইজের একটা বাঁধাকপি (না কচি, না বুড়া)
- আধা চা-চামচ হলুদের গুড়া (বেশি হলে তিতা লাগে)
- পরিমাণ মত লবণ
- পরিমাণমত সরিষার তেল (আমি সয়াবিন তেল খাই না!)
- আধা কাপ পেঁয়াজ কুঁচি (পেঁয়াজের যা দাম, কম হলেও ক্ষতি নাই)
- তিন-চারটা কাঁচা মরিচ কুঁচি
- এক চিমটে ভালবাসা (না হলে স্বাদ আসবে না)
আমি সবকিছু আমার হিসেব করে বললাম। আপনি চাইলে যেকোন সাইজের বাঁধাকপি ভাজি করতে পারেন আর হলুদ-মরিচ-লবণ-তেল খুশিমত খরচ করতে পারেন।
ডিসক্লেইমার
ধারাভাষ্যে যাওয়ার আগে ডিসক্লেইমার দেয়া দরকার। আমি একজন ব্যাচেলর, ঢাকা শহরে ঠেকায় পড়ে শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে রান্নাবান্না শিখছি। এই রেসিপি ফলো করে বিপদে পড়লে আমার কোন দায়-দায়িত্ব নাই।
ধারাভাষ্য
প্রথমেই পানি দিয়ে গোটা বাঁধাকপিটা ভাল করে ধুয়ে দিন। তারপর একে চারভাগ করে প্রতিটা ভাগকে ট্রস-ট্রস করে কুঁচি-কুঁচি করতে হবে। আর শক্ত অংশগুলো ফেলে দেয়াই ভাল। না হলে দাঁতের নিচে বেহুদা কচকচ করবে। আর যদি রাখতেই চান, তবে রান্নার সময়টা একটু দীর্ঘ করতে হবে আর কি! খেতে কিন্তু খারাপ লাগে না।
এবার পেঁয়াজ কুঁচি করার পালা। আমার মতে পেঁয়াজ কুঁচি মিহি হওয়াই ভাল। এতে ভাজির সাথে ভাল করে মিশে যায়। কাঁচা মরিচ অবশ্য মিহি কুঁচির দরকার নাই। মাঝখানে দিয়ে চিরে দিলেই হল। আচ্ছা কাঁচা মরিচ কি প্রতিসাম্য?
এবার তরকারির পাতিলে তিন-চার চা চামচ সরিষার তেল নিয়ে হালকা আঁচে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচা মরিচ কুঁচি ছেড়ে দিন। এবার আপনাকে দৌড়ের উপর থুক্কু নাড়ার উপর থাকতে হবে। না নাড়ালে পাতিলের তলায় লেগে যেতে পারে।
পেঁয়াজ বাদামি বর্ণ ধারণ করলে আধা চা-চামচ হলুদের গুঁড়া দিয়ে দিন। আসলে হলুদ এই পর্বে দিতে হবে, নাকি বাঁধাকপি সিদ্ধ হওয়ার পর দিতে হবে - এটা নিয়ে একটা বিতর্ক প্রতিযোগীতা হতে পারে। আমি দুভাবেই খেয়ে দেখেছি, স্বাদে কোন তফাৎ পাইনি। যাহোক হালকা উপর ঝাপসা করে লবণ ছিটিয়ে দিতে পারেন এই পর্যায়ে।
এবার ধুয়ে রাখা বাঁধাকপির কুঁচি পাতিলে ছেড়ে দিন। আচ্ছা, আমি কি ধুয়ে নিতে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম? উফ! মনে করতে পারছি না। সে যাই হোক, ঢাকনা দিয়ে পাতিলের মুখ ঢেকে দেয়ার সময় চলে এসেছে। চুলার জ্বাল মৃদু রাখাই উত্তম। বাঁধাকপি কুঁচি থেকে যে পানি বের হবে তাতেই জিনিস সিদ্ধ হয়ে যাবার কথা। না হলে হালকা পানি দিতে পারেন। আচ্ছা, তাতে কি এটা তরকারি হয়ে যাবে?
বাঁধাকপি সিদ্ধ হয়ে আসলে চামচ দিয়ে উল্টে-পাল্টে মশলা আর বাঁধাকপি ভাল করে মিশিয়ে নিন। লবণ না হলে এই অবস্থাতেই লবণ দিয়ে আরো কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে পারেন। ভাজি খাওয়ার উপযোগী নরম হয়ে গেলে আমাদের রান্না শেষ।
হয়ে গেল ব্যাচেলরীয় পদ্ধতিতে পাতাকপি ভাজি। থুক্কু, বাঁধাকপি ভাজি।
comments powered by Disqus