‘সহজ ভাষায় পাইথন ৩’ বইটি নিয়ে প্রায়শই কিছু মধুর প্রশ্নের সম্মুখীন হই। দিন দিন (আমার প্রতি) মানুষের ভালবাসা যেভাবে বাড়ছে, প্রশ্নও সমানুপাতিক হারেই বাড়ছে। আসলে যে কারোর মনেই এরকম প্রশ্ন আসা বেশ স্বাভাবিক। কিন্তু একই প্রশ্নের উত্তর বারবার দিতে কেমন জানি লাগে আমার। নিজেকে হোয়াইল লুপের অধিবাসী মনে হয়। তাই ভাবলাম, এসব মধুর প্রশ্নের সুমধুর উত্তরগুলো সজিপ্র (সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন) সেকশনে লিখে রাখা যাক।
(১) প্রশ্ন: সি নাকি পাইথন? কোনটি দিয়ে শুরু করব?
উত্তর: আপনার যেটি ভাল লাগে ও সহজ মনে হয় সেটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। বিস্তারিত এখানে।
(২) প্রশ্ন: পাইথন কেন?
উত্তর: পাইথন বিগিনার ফ্রেন্ডলি ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথনকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন পাইথন লেখা কোড সহজে বোঝা যায়। তাই পাইথন খুবই সহজবোধ্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথন কোড পড়া আর ইংরেজি পড়া একই জিনিস। মনেই হয় না যে এটা কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সেজন্য পাইথনে কোড লেখা বিনোদনেরই অপর নাম। একটা কাজের সাথে যখন বিনোদন যোগ হয় তখন সেই কাজটা আমাদের মস্তিষ্ক অনেক দ্রুত গ্রহণ করতে পারে। তাই তো বিশ্বের সেরা ইউনিভার্সিটিগুলোতে পাইথন দিয়েই প্রোগ্রামিং শেখানো শুরু করা হয়। আর গিটহাবের বিভিন্ন প্রজেক্ট অ্যানালিসিস করে বোঝা যায়, পাইথন হল তৃতীয় জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। পেশাগত দিক থেকে, পাইথনকে ওয়েব প্রোগ্রামিং, গুই প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্ক প্রোগ্রামিং, সিস্টেম প্রোগ্রামিং, বিগ ডাটা, ডাটা মাইনিং, ডাটা অ্যানালিসিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সায়েন্টিফিক কম্পিউটিং মোটামুটি সব সেক্টরেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আর দিনকে দিন এর চাহিদা শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে।
(৩) প্রশ্ন: চাকরির বাজারে পাইথনের চাহিদা কেমন?
উত্তর: স্টাকওভারফ্লো ডেভেলপার সার্ভে-২০১৮ অনুসারে, পাইথন হল সপ্তম জনপ্রিয় টেকনোলজি। গত কয়েক বছর ধরেই পাইথন তার এই জায়গা দখল করে রয়েছে, এর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বাড়ছেই। শুধু তাই নয়, মোস্ট ওয়ান্টেড প্রোগ্রামিং টেকনোলজির তালিকায় পাইথন রয়েছে তিন নম্বরে। বিভিন্ন সেক্টরে টপ পেয়িং টেকনোলজির তালিকায় পাইথন রয়েছে শীর্ষ দশের ভিতরেই।
(৪) প্রশ্ন: এই বইটি কাদের জন্য?
উত্তর:
- আমরা যারা প্রোগ্রামিংয়ের ‘প’ও পারি না, কিন্তু শিখতে চাই।
- আমরা যারা নিশ্চিত হয়ে গেছি এই ইহকালে আর যাই হোক প্রোগ্রামিংটা শেখা সম্ভব না।
- আমরা যারা প্রোগ্রামিং পারি, কিন্তু পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজটা পারি না।
- আমরা যারা পাইথন শিখতে চাই।
- আমরা যারা পাইথন-২ পারি, কিন্তু পাইথন-৩-এ মাইগ্রেট হতে চাই।
(৫) প্রশ্ন: এই বইটি কাদের জন্য নয়?
উত্তর:
- আমরা যারা কম্পিউটারের মৌলিক ব্যবহার জানি না।
- আমরা যারা পাইথন-৩ নয়, পাইথন-২ শিখতে চাই।
- আমরা যারা ইতিমধ্যেই পাইথন-৩-এর সবকিছুই পারি।
(৬) প্রশ্ন: আমি ম্যাথে অনেক দুর্বল। আমি কি বইটি পড়ে পাইথন শিখতে পারব?
উত্তর: স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত আমাদের যতটুকু গণিত শেখানো হয়, ততটুকু জানলেই আপনি বইটি পড়ে পাইথন শেখা শুরু করতে পারেন।
(৭) প্রশ্ন: সহজ ভাষায় পাইথন ৩ তো পেলাম। কিন্তু পাইথন ১, পাইথন ২ কোথায় পাব?
উত্তর: অনেকের কাছেই মনে হতে পারে বইটি হয়ত ‘সহজ ভাষায় পাইথন’ সিরিজের তৃতীয় বই। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। খোলা বাজারে পাইথনের মেজর দুইটা ভার্সন পাওয়া যায় – পাইথন-২, পাইথন-৩। ভার্সন দুইটার ভিতরে মেজর পার্থক্য যথসামান্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আসছে ২০২০ সালে পাইথন-২ এর জীবনাবসান ঘটবে। সুতরাং পাইথন-৩ হল পাইথনের বর্তমান ও ভবিষ্যত। এখন কেউ পাইথন শেখা শুরু করলে তার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে পাইথন-৩ শেখা। আর এই বইটি পাইথন-৩ এর উপর লেখা বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘সহজ ভাষায় পাইথন ৩’।
(৮) প্রশ্ন: বইটির দাম কত?
প্রশ্ন: প্রথম সংস্করণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪০০ টাকা। তবে বিক্রেতারা যেহেতু তাদের সাধ্যানুযায়ী পাঠকদের ডিসকাউন্ট দিয়ে বই বিক্রয় করে থাকেন, তাই গড়ে বইয়ের দাম ২৬০-৩৪০ টাকার ভিতর হওয়ার কথা। তবে দ্বিতীয় সংস্করণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫০০ টাকা করা হতে পারে।
(৯) প্রশ্ন: এই বইটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে?
উত্তর:
- বইটি পড়ার সময় প্রতিটি টপিক বুঝে পড়তে হবে, মুখস্থ করার দরকার নেই।
- বইটির চ্যাপ্টারগুলো এলোমেলোভাবে না পড়ে ধারাবাহিকভাবে পড়তে হবে। কারণ বোঝার সুবিধার জন্য অনেক বিষয় প্রথম দিকে আলোচনা না করে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিতভাবে বোঝানো হয়েছে।
- প্রোগ্রামিং হলো হাতেকলমে করার জিনিস। তাই প্রতিটি উদাহরণ দেখার পাশাপাশি নিজে নিজে রান করে দেখতে হবে।
- প্রোগ্রামিং হলো চর্চা করার জিনিস। তাই প্রতিটি টপিকে দেওয়া সমস্যাগুলো নিজে নিজে অনুশীলন করতে হবে।
(১০) প্রশ্ন: পাইথন শেখার জন্য বইটি কি ভাল হবে?
উত্তর: বইটি পড়েছেন আপনার এমন কোন পরিচিত শিক্ষক, বড় ভাই, বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
(১১) প্রশ্ন: বইটি কোথায় পাওয়া যাবে?
উত্তর: আপনার নিকটস্থ লাইব্রেরিতে প্রথমেই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। না পেলে, নিচের লিস্টে থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে পারেন।
প্রতিষ্ঠান | ঠিকানা | ফোন নম্বর |
---|---|---|
মানিক লাইব্রেরী | নীলক্ষেত, ঢাকা | ০১৭৩৫-৭৪২৯০৮ |
রকমারি ডট কম | অনলাইন | ১৬২৯৭ |
হক লাইব্রেরী | নীলক্ষেত, ঢাকা | ০১৮২০-১৫৭১৮১ |
(১২) প্রশ্ন: আমি অমুক জায়গায় থাকি। এখানে কোন লাইব্রেরিতে বইটি পাওয়া যাবে?
উত্তর: ১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দ্রষ্টব্য।
(১৩) প্রশ্ন: আমি তো ঢাকার বাহিরে থাকি। আমার কাছের কোন লাইব্রেরিতে বইটি পাওয়া যাচ্ছে না। আমি কিভাবে কিনব?
উত্তর: বিকাশে অগ্রীম টাকা দিয়ে কুরিয়ার চার্জ ছাড়াই মানিক লাইব্রেরী (০১৭৩৫-৭৪২৯০৮) থেকে বইটি কিনতে পারেন আপনি। এছাড়া অনলাইনে রকমারি ডট কম থেকে বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় বসে বই পেতে পারেন আপনি। এরা সম্ভবত ক্যাশ-অন-ডেলিভারি পদ্ধতিতেও বই বিক্রয় করে থাকে।
(১৪) প্রশ্ন: আমি বাংলাদেশের বাহিরে থাকি। আমি কিভাবে বইটি কিনব?
উত্তর: আপাতত এই সমস্যার আশু সমাধান জানা নেই। তবে দেশে অবস্থান করছেন এমন কোন পরিচিত জনকে বইটি কিনে আপনার কাছে পাঠাতে বলতে পারেন।
(১৫) প্রশ্ন: বইয়ের দাম আমার ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে হয়ে গিয়েছে। আমি কি করতে পারি?
উত্তর: কোন সমস্যা নেই। এখান থেকে মূল বইয়ের খসড়া সংস্করণটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়তে পারেন।
(১৬) প্রশ্ন: বইটি পড়লে কি পাইথনের সবকিছু শিখতে পারব?
উত্তর: এক বইতে পাইথনের খুঁটিনাটি কাভার করা বড় কঠিন ব্যাপার। তারপরও সাধ্যানুযায়ী মোটামুটি সবকিছু কাভার করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সূচীপত্র দেখতে পারেন।
(১৭) প্রশ্ন: এই বইটি পড়লেই কি আমি ডেস্কটপ অ্যাপ, ওয়েব অ্যাপ তৈরি করতে পারব?
উত্তর: শুধু A, B, C শিখলেই কি ইংরেজিতে উপন্যাস লেখা সম্ভব? নাহ, সম্ভব না। আবার A, B, C শেখা ছাড়াও কিন্তু ইংরেজিতে উপন্যাস লেখা সম্ভব না। তাই আপাতত বইটি পড়ে কোর পাইথন শেখা শুরু করুন। তারপর ধীরে ধীরে নিজেই বুঝতে পারবেন।
(১৮) প্রশ্ন: বইটি পড়তে গিয়ে একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। কি করতে পারি?
উত্তর: ফেসবুক গ্রুপ পাইথন বাংলাদেশে সমস্যাটি পোস্ট করতে পারেন। এখান থেকে অতি দ্রুত সাহায্য-সহযোগীতা পাবেন আপনি।
(১৯) প্রশ্ন: আমি বইটি সম্পূর্ণ পড়েছি। এখন আমি কি করব?
উত্তর: বইয়ের শেষ দিকের চ্যাপ্টারগুলো সম্ভবত আপনি পড়েননি। বইটি পড়ার পর কি করতে হবে, ডাটা-স্ট্রাকচার ও অ্যালগরিদম কিভাবে শিখতে হবে, ওয়েব ফ্রেমওয়ার্ক ও গুই ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে কিভাবে ধারণা লাভ করতে হবে তা বইতেই উল্লেখ করা রয়েছে।
(২০) প্রশ্ন: শেষের কিছু চ্যাপ্টার অল্পতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কেন?
উত্তর: ইচ্ছে করেই। আসলে বইটি সবার জন্য লেখা। মনোযোগী ছাত্রদের জন্য টপিকের শেষে আরো বেশি শেখার রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। ঐসব টপিক বড় করলে বইয়ের কলেবর আরো বেড়ে যেত যা অমনোযোগী ছাত্রদের শেখার প্রতি অনীহা ও ভয় সৃষ্টি করত।
(২১) প্রশ্ন: প্রথম সংস্করণ ও দ্বিতীয় সংস্করণের ভিতর পার্থক্য কি?
উত্তর: দ্বিতীয় সংস্করণে নতুন সাতটি অধ্যায় (যেমন: টাইপ হিন্টিং) যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া বেশ কিছু উদাহরণ ও অনুশীলনী যোগ করা হয়েছে। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হবার পর পাইথনের নতুন যেসব আপডেট এসেছে তার প্রতিফলন রয়েছে এই বইয়ে। পুরো বই রিফরম্যাটিং করে প্রতিটি কোডব্লককে বাক্সবন্দী করা হয়েছে, পূর্বের অনেক ভুল-ভ্রান্তি দূর করা হয়েছে। বাংলা লেখা ও কোডব্লকের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ও আলাদা ফন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে রিড্যাবিলিটি বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। বইয়ের কাভারও রিডিজাইন করা হয়েছে।
(২২) প্রশ্ন: আমি সিএসই/আইটির ছাত্র নই। আমি কি এই বই অনুসরণ করে পাইথন শিখতে পারব?
উত্তর: যদি আপনি সত্যিই পাইথন শিখতে চান, যদি আপনার হৃদয়ে আগ্রহ থাকে তবে অবশ্যই পারবেন।
(২৩) প্রশ্ন: আপনি কি ডাটা স্ট্রাকচার, এলগরিদম, জ্যাঙ্গো, ফ্লাস্ক অথবা অন্য কিছু নিয়ে বই লিখবেন?
উত্তর: এটা বলা খুবই মুশকিল। তবে ইচ্ছে আছে শেষ বয়সে আরো কিছু বই লিখব।
(২৪) প্রশ্ন: এই বইয়ে কি পাইথনের অ্যাডভান্সড টপিক কাভার করা হয়েছে?
উত্তর: পাইথনের অ্যাডভান্সড টপিক বলতে আসলে ঠিক কি বুঝায় তা আমার কাছেই পরিষ্কার নয়। তবে বইয়ের সূচীপত্র দেখলে হয়ত আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েও যেতে পারেন।
(২৫) প্রশ্ন: প্রথম সংস্করণ বদলে কি দ্বিতীয় সংস্করণ নেওয়া যাবে?
উত্তর: দুঃজনক হলেও এটা সত্যি যে এরকমটা এই মূহুর্তে সম্ভব নয়।
আরো প্রশ্ন আছে! কোন সমস্যা নেই। কমেন্ট বক্স তো খোলা রয়েছেই।
comments powered by Disqus