Zed A. Shaw – প্রোগ্রামিং পাড়ায় একটি পরিচিত নাম, পরম শ্রদ্ধার পাত্র। বিশেষত যারা পাইথন বা রুবির মত শৈল্পিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে গুঁতাগুঁতি করেন। পাইথন নিয়ে লেখা তার বিখ্যাত বই ‘লার্ন পাইথন দ্যা হার্ড ওয়ে’ তে তিনি এমন কিছু পরামর্শ শেয়ার করেছেন যা যেকোন প্রোগ্রামারের চিন্তা-চেতনাই বদলে দিতে পারে; নিকষ আঁধারে দেখাতে পারে আলোর দিশা। আর সেটারই ভাবানুবাদ আপনাদের সামনে তুলের চেষ্টা করছি আজ। তো শুরু করা যাক!
সম্ভবত তুমি এই বইটা পড়া শেষ করেছ এবং প্রোগ্রামিংটা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। হয়ত কর্মজীবনে এটা তোমার কাজে লাগবে। আবার হতে পারে, শখ ছাড়া এটা হয়ত তোমার কাছে আর কিছুই না। কিন্তু তা যাই হোক না কেন, তোমার কিছু পরামর্শের দরকার হবে। অন্য কোন কারণ নাই; বরং এটা নিশ্চিত করার জন্য যে তুমি ঠিক পথেই এগোচ্ছ আর প্রোগ্রামিং থেকে যে নির্মল বিনোদন পাওয়ার কথা, সেটা পাচ্ছ। (অনলি বিনোদন ইজ রিয়েল!)
একটা দীর্ঘ সময় ধরে আমি প্রোগ্রামিংয়ের সাথে জড়িত। এত দীর্ঘ যে এখন প্রোগ্রামিংয়ের নাম শুনলেই আমার মুখ বাংলা পাঁচের মত হয়ে যায়। এই বইটি যখন লিখছিলাম তখন আমি মোটামুটি ২০ টার মত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানি। তাছাড়া একদিনে বা এক সপ্তাহে নতুন একটা ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা আমার জন্য এখন চুটকির ব্যাপার। অবশ্য এটা নির্ভর করে ল্যাঙ্গুয়েজটা কতটা সহজ বা বিটখিটে তার উপর। মদ্দা কথা হল, দিনশেষে জিনিসটা আমার জন্য পুরাই বিরক্তিকর আর এখন এতে আর কোন আগ্রহও নাই। খবরদার, আমি কিন্তু একবারও বলি নাই যে প্রোগ্রামিং জিনিসটাই বিরক্তির ডিব্বা। কিন্তু তোমার কাছে মনে হতে পারে। যেমনটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
আমার এই দীর্ঘ জীবনে আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি - সত্যি কথা হল, ল্যাঙ্গুয়েজের কোন গুরুত্বই নাই, তুমি এটা দিয়ে কি করছ সেটাই আসল। আসলে, আমি এটা সবসময়ই জানতাম। কিন্তু মাঝে মাঝে ল্যাঙ্গুয়েজের প্রেমে পড়ে মগা হয়ে ভুলে যেতাম। কিন্তু না, এখন আর ভুলি না আর তোমারও ভোলা উচিত না।
তুমি কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটা পার আর কাম-কাজে ব্যবহার কর – এটার কোন বিশেষত্ব নাই। একটি ল্যাঙ্গুয়েজ মানে একটি অস্ত্রবিশেষ যা তুমি তোমার হাবিজাবি নানা কাজে ব্যবহার করতে পারবা। কিন্তু যদি কোন ল্যাঙ্গুয়েজের ফিচার দেখে মগা হয়ে যাও তখন আর এই জিনিসটা মাথায় কাজ করবে না।
শৈল্পিক ফর্মগুলোর ভিতরে প্রোগ্রামিংই একমাত্র ফর্ম যার দ্বারা তুমি মিথস্ক্রিয় শিল্পকে উপস্থাপন করতে পারবা। তুমি এমন সব প্রজেক্ট তৈরি করতে পার যা নিয়ে বিভিন্ন লোক নাড়াচাড়া করতে পারে। এভাবে তুমি পরোক্ষভাবে তাদের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করতে পার। আর কোন শৈল্পিক ফর্মই এতটা মিথস্ক্রিয় না যা তোমাকে এইসব সুবিধা দেবে। যেমন ধর, চলচ্চিত্রের প্রবাহটা শুধু একদিকে। আর চিত্রকলা স্থিরতার মূর্ত প্রতীক। কিন্তু কোড? সে দুই রাস্তাতেই আছে। (কি তাজ্জব ব্যাপার!)
পেশা হিসেবে প্রোগ্রামিং কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয়। ধরা যাক, তুমি প্রোগ্রামিং রিলেটেড একটা চাকরি থেকে টাকা-পয়সা কামাই কর। কিন্তু তুমি একটা ফাস্ট ফুডের দোকান চালিয়েও ঐ রকমের টাকা-পয়সা কামাতে পারবা আবার সুখে-শান্তিতে থাকতেও পারবা। আর কোডকে গোপন অস্ত্র হিসাবে অন্য পেশায় ব্যবহার করলে তো কথাই নাই। (জীবন হবে ঝিঙ্গালালা!)
যারা বিভিন্ন আইটি ফার্মে কাজ করে তারা একেবারেই সস্তাদরের লোকজন, কেউ সম্মান দেয় না। কিন্তু যারা বায়োলজি, মেডিসিন, গভার্নমেন্ট, সোশিওলজি, ফিজিক্স, হিস্টোরি আর ম্যাথম্যাটিক্সে কাজ করে তারা সম্মান পায়। আবার এইসব ক্ষেত্রগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অসাধারণ কাজও করতে পারে।
অবশ্যই, এই সব পরামর্শ অর্থহীন। যদি তোমার সফটওয়্যার ডেভেলপিংয়ে আগ্রহ থাকে তবে তোমার উচিত নিজের জীবন উন্নত করতে এটাকে ব্যবহার করা। মানে, যদি তুমি পার আর কি! আমার পরামর্শ হল – এগিয়ে যাও আর এই অদ্ভুত, বিস্ময়কর ও শৈল্পিক জিনিসটার ভিতর থেকে এমন কিছু খুঁজে বের কর যা বিগত ৫০ বছরেও কেউ খুঁজে বরে করতে পারেনি। পাশাপাশি, যখন যেভাবে পার, জিনিসটাকে উপভোগ কর।
সবশেষে, আমি বলব যে সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে শেখাটা তোমাকে আর দশ জন থেকে আলাদা করে তুলবে। আমি আবার বলছি - ভাল বা খারাপ করবে না, শুধু আলাদা করে তুলবে। তুমি হয়ত খেয়াল করবে যে কেবলমাত্র সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পার বলে লোকে তোমার সাথে রুঢ় আচরণ করছে। যদ্দুর মনে হয়, তারা তোমার নাম দেবে আবাল। হয়ত তুমি এটাও খেয়াল করবে যে তারা তোমার সাথে কখনো তর্ক করছে না। কারণ তুমি সহজেই তাদের যুক্তিগুলোকে খন্ডন করতে পার। এমনকি, তুমি হয়ত এটাও খেয়াল করবে যে ‘কিভাবে কম্পিউটার কাজ করে’ এই সামান্য জিনিসটুকু জানার কারণে তুমি তাদের কাছে বিরক্তিকর আর অদ্ভুদ চিড়িয়া হিসেবে গণ্য হচ্ছ।
এইক্ষেত্রে আমি শুধু একটা কথাই বলব - ‘তাহারা মুড়ি খাউক’। এই বিশ্বের আরো অনেক অদ্ভুদ চিড়িয়ার দরকার আছে, যারা এই জিনিসটাকে ভালবাসে, যারা জানে কিভাবে এই জিনিসটা কাজ করে। আর যখন তারা তোমার সাথে এরকম আচরণ করে, শুধু মাথায় রেখ – এই পথচলাটা কেবলই তোমার, তাদের নয়। আর দশটা মানুষ থেকে আলাদা হওয়া কোন অপরাধ নয়। বরং যারা তোমায় এসব কথা বলে তারা তোমার প্রতি জেলাস ছাড়া আর কিছুই না। কারণ, তুমি এমন একটা বিদ্যা রপ্ত করতে পেরেছ যা তারা তাদের স্বপ্নেও অর্জন করতে পারে নাই, আর পারবেও না।
তুমি কোড লিখতে পার, তারা পারে না। ভেবে দেখ - এই ব্যাপারটাই অস্থির।
মূল লেখা: http://learnpythonthehardway.org/book/advice.html
ভাবানুবাদ: মাকসুদুর রহমান মাটিন
তারিখ: ১৩ মার্চ, ২০১৬
comments powered by Disqus